সময়ের সাথে সাথে দ্রুত বদলে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতির ধরণ। Kauffman Foundation এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ৫০ শতাংশ নতুন জব তৈরি করে দিচ্ছে ওই দেশের স্টার্টআপগুলো। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্লোবাল ও ন্যাশনাল ইকোনোমিতে স্টার্টআপের প্রভাব।
আমাদের নতুন বাংলাদেশের অর্থীনিতেকে শক্তিশালী করতেও স্টার্টআপের উপরে নির্ভরশীলতার বিকল্প নেই। স্টার্টআপ বলতে আমরা সাধারণত এমন নতুনত্বযুক্ত ব্যবসাকে বুঝে থাকি যার মাধ্যমে সহজে অনেক মানুষের জীবনযাত্রায় পজিটিভ প্রভাব রাখা যেতে পারে।
সাধরণত ৩ টি বৈশিষ্ট্য দিয়ে স্টার্টআপকে প্রথাগত বিজনেস থেকে আলাদা করা যায়:
১. ইনোভেশন বা নতুনত্ব
২. স্কেলেবিলিটি বা সহজে অনেকের কাছে পৌঁছে যাবার ক্ষমতা
৩. উচ্চ রিস্ক এবং উচ্চ গেইন
পৃথিবীর প্রায় সব স্টার্টআপকেই মোটা দাগে ২ টি ভাগে বিভক্ত করা যায়:
১. প্রোডাক্ট নির্ভর:
সাধারণত এই ধরনের স্টার্টআপ নতুন ধরনের প্রোডাক্ট দিয়ে নতুন/ পুরাতন কোনো সমস্যা সমাধান করে। এইসকল স্টার্টআপ উচ্চ গ্রোথে ফোকাস করে এবং অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা থাকে অধিক।
২. সার্ভিস নির্ভর:
এই ধরনের স্টার্টআপ কোনো ডিজিটাল স্কিল দিয়ে তাদের কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করে থাকে। অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা তুলনামূলক কম হলেও এরা বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি করে থাকে।
এবার আসা যাক কীভাবে একটি স্টার্টআপ কোম্পানি দেশ ও পৃথিবীর অর্থনীতির জন্য উপকারী সে আলোচনায়।
প্রথমত, স্টার্টআপসমূহ ব্যাপক পরিমাণে কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়ে দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করে। এতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হয়, তেমনি অন্যদিকে অর্থনীতির চাকাও সচল হয়। দ্বিতীয়ত, স্টার্টআপসমূহের উৎপাদন দেশের জিডিপি ও জিএনপি-তে সরাসরি ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে, দেশে বসে থেকেই আজ অনেক স্টার্টআপ কাজ করছে বিদেশী কাস্টমারদের জন্য। ফলে বাড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্য। তৃতীয়ত, বৈদেশিক বিনিয়োগ নিয়ে আসতে স্টার্টআপসমূহের ভূমিকা ব্যাপক। ভালো ভালো স্টার্টআপ নিজেদের প্রমাণ করে ফরেইন ইনভেস্টরদের আকৃষ্ট করে এক দেশের উপরে অন্যদেশের বিনিয়োগ বাড়ায়।
তাই আমাদের নতুন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে স্টার্টআপদের ভূমিকা থাকবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে যেন স্টার্টআপের দিকে তরূণরা আগ্রহী হয়, নির্বিঘ্নে নিজেদের প্রতিষ্ঠা ও পরিবর্ধন করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে সরকারকে। যেসকল উদ্যোগ সরকার ও অন্যান্য সংস্থা থেকে গৃহীত হতে পারে:
১. স্টার্টআপবান্ধব পর্যাপ্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
২. প্রয়োজনীয় ট্যাক্স ইনসেন্টিভের ব্যবস্থা করা যেন উদ্যোক্তারা আরো উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে পারে।
৩. অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগ দেয়া। প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট সুবিধা, যোগাযোগ সুবিধা, পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ইত্যাদি নিশ্চিত করা।
৪. আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানো। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে অধিক পরিমাণে ইনকিউবেটর ও ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
৫. উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত মেন্টরিং, শিক্ষা ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুব্যবস্থা করে দেয়া। সফলতম স্টার্টআপগুলোকে প্রমোট করে অন্যান্যদের উৎসাহ প্রদান করা।
৬. প্রয়োজনীয় কোলাবরেশন করা, ইনভেস্টমেন্ট রেইজ করা যেনো অধিকতর সহজ করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
সেইসাথে তরূণদেরকেও "চাকরি করবো না, চাকরি দিবো" এমন মনোভাব তৈরি করে কাজ করতে হবে। আগামীর বিশ্বে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে তারাই প্রতিষ্ঠা পাবে, যারা আজকে থেকেই স্টার্টআপ কালচার সুন্দর করতে মনোযোগী হবে।
Author's Information
Md. Rakibul Islam Rafi, BUET
Draft Submitted on: 15 August, 2024.